নোয়াখালী থেকে খোন্দকার কাওছার হোসেন : ভোটের রাতে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে শিকার পারুল বেগমের পাশে থাকবে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল শনিবার দুপুরে জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তাকে দেখতে এসে বিএনপি মহাসচিব পারুলের মাথায় হাত বুলিয়ে আবেগ আপ¬ুত কন্ঠে এই অভয় দেন। তিনি বলেন, ‘বোন আমরা তোমার পাশে আছি। তোমার কোনো ভয় নেই।’ ‘বোন, এই নিমর্মতার অবশ্যই একদিন বিচার হবে। আল¬াহর বিচার করবেন।’
মাথায় হাত বুলানোর সময়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল। এ সময়ে চারপাশের নেতার অশ্রুসজল হয়ে পড়তে দেখা যায়। পারুলে কান্নার সাথে তার স্বামী সিএনজি চালকও বিএনপি মহাসচিবকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। এরপর জেএসডির আসম আবদুর রব ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও পারুলকে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেন। পরে বিএনপি মহাসচিব, আসম আবদুর রব, কাদের সিদ্দিকী পারুলকে আর্থিক অনুদান দেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পারুলের স্বামী ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। জেনারেল হাসপাতালের ০৯ নম্বর কেবিন চিকিতসাধীন রয়েছেন পারুল।
পরে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোটের অধিকার থেকে আওয়ামী লীগ মানুষকে বঞ্চিত করেছে তাদের প্রতারিত করেছে। এই বঞ্চিত করার পরে যেহেতু তারা জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সেজন্য তারা এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।” ‘নির্বাচনের পূর্বে, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরবর্তিতে যে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে তাতে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এমনকি আমার বোন নোয়াখালীতে ধর্ষিতা পর্যন্ত হয়েছেন চার সন্তানের মা তিনি। আমরা এর ধিক্কার জানাচ্ছি, তীব্রনিন্দা জানাচ্ছি। জনগনের কাছে এর বিচার দিচ্ছি।”
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এটা দেশের রাজনীতিতে একটা দীর্ঘ স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করবে। আমরা মনে করি একটা অন্ধকার যুগে প্রবেশ করল, বাংলাদেশ গণতন্ত্র বিহীন হলো, একদলীয় শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করার তাদের যে নীল নকশা সেদিকে তারা এগিয়ে গেলো।” এর বিরুদ্ধে আপনারা কি করবেন সাংবাদিকদের এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।”
এ সময়ে বিএনপির বরকত উল¬াহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, শামসুল আলম, মাহবুবউদ্দিন খোকন, হারুনুর রশীদ, শহিদ উদ্দিন চৌথুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, রেহানা আখতার রানু, সৈয়দ আসিফা আশরাফী পাপিয়া, শামীমা বরকত লাকী, হারুনুর রশীদ, আকবর হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান খোকা, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান, স্থানীয় নেতা জেলা সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, শহর সভাপতি আবু নাসের, অঙ্গসংগঠনের মঞ্জুরুল আজিম সুমন, নুরুল আমিন খান, সাবের আহমেদ, মিজানুর রহমান মিজান, আবু হাসান নোমান প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলীর সিএনজি চালকের স্ত্রীকে তার স্বামী-সন্তানকে বেঁধে পিটিয়ে আহত করা হয় এবং ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় ৩১ ডিসেম্বর নয়জনের নাম উলে¬খ করে চরজব্বর থানায় মামলা করেন নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সকাল সাড়ে ৭ টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বিএনপি মহাসচিব জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নিয়ে নোয়াখালী রওনা হন। কুমিল¬ায় ৪৫ মিনিট যাত্রাবিরতির পর বেলা সাড়ে ১২টায় বিএনপি মহাসচিব নেতাদের নিয়ে নোয়াখালীর জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছান। এ সময়ে নোয়াখালীর মাইজদী সড়ক থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা দুই ধারে দাঁড়িয়ে বিএনপি মহাসচিবসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মুহুর্র মুহুর্র করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। নেতা-কর্মীরা দলের কারাবন্দি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভোটারশূণ্য ‘ভুয়া’ নির্বাচনের বিরুদ্ধে শে¬াগান দেয়। বিকালে বিএনপি মহাসচিবের কর্মসূচির মধ্যে আছে, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পারুল বেগমের খোঁজ-খবর নেয়া এবং জেলা আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময়। বিকালে কর্মসূচি শেষ করে ঢাকা ফিরেন বিএনপি মহাসচিব।
Leave a Reply